আসসালামু আলাইকুম আশা আপনার সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আমি আপনাদের মাঝে একটা গল্প শেয়ার করতেছি। আশা করি ভালো লাগবে আমি যেহেতু নতুন তাই ভুল হলে ক্ষমতার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কথা না বাড়িয়ে চলেন গল্পে ফিরা যাক....
একটা ছোট্ট গ্রামে হিপু আর দিপু নামের দুই বন্ধু থাকত। তারা দুজনেই খুব চঞ্চল, তবে একে অপরের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল। হিপু গ্রামের প্রধানের ছেলে, আর দিপু একজন সাধারণ কৃষকের মেয়ে। কিন্তু তাদের বন্ধুত্বে কখনো কোনো পার্থক্য দেখা যেত না। তারা স্কুলে একসাথে যেত, নদীর ধারে বসে গল্প করত, আর গাছের নিচে বসে নানা রকম কল্পনার জগতে হারিয়ে যেত।
তাদের গ্রামটা ছিল খুব সুন্দর। বড় বড় গাছ, পাখিদের ডাক, আর নদীর স্বচ্ছ পানি – সব মিলিয়ে গ্রামের পরিবেশ ছিল মায়াময়। ছোটবেলা থেকেই হিপু আর দিপু একে অপরের পাশে ছিল। হিপুর ছিল দুষ্টুমি করার স্বভাব, আর দিপু ছিল কিছুটা শান্ত প্রকৃতির। হিপু সবসময় দিপুকে নতুন কিছু করতে উত্সাহ দিত, আর দিপু তাকে সমর্থন করত।
একদিন হিপু আর দিপু ঠিক করল, তারা গ্রামের পাশে যে পাহাড়টা আছে, সেখানে গিয়ে উঠবে। ছোটবেলা থেকেই তারা পাহাড়ের উপর থেকে পুরো গ্রামটা দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু কেউ কখনো ওখানে ওঠেনি, কারণ পাহাড়টা অনেক উঁচু আর ভয়ানক ছিল বলে সবাই বলত।
দুজনেই অল্প বয়সের হওয়ায় ভয়ের বদলে উত্তেজনা কাজ করছিল। তারা এক সকালে উঠে ঠিক করল, আজই যাত্রা শুরু করবে। পথে যেতে যেতে হিপু দিপুকে বলল, "তুই ভয় পাচ্ছিস না তো?"
দিপু হেসে বলল, "আমি তোকে ভয় পাব নাকি? তোর সাথে থাকলে ভয় কিসের?"
তারা পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেল। প্রথমে সবকিছু সহজ লাগছিল, কিন্তু যত উপরে উঠছিল, ততই পথটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। হিপু দিপুর দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই ক্লান্ত হয়ে গেছিস, তাই না? আমি তোকে বয়ে নিয়ে যেতে পারি।"
দিপু বলল, "না হিপু, আমি পারব। তুই চিন্তা করিস না।"
হিপু হেসে বলল, "দেখ, তুই সবসময় বলিস তুই শক্তিশালী, কিন্তু আমি জানি তুই আসলে অনেক মিষ্টি।"
এই বলে হিপু দিপুর হাতটা শক্ত করে ধরল। দিপু একটু লজ্জা পেল, কিন্তু সে কিছু বলল না। তারা আবার যাত্রা শুরু করল। হিপু মাঝে মাঝে পেছন ফিরে দেখত, দিপু ঠিক আছে কিনা। সে জানত, দিপু কখনোই দুর্বলতা দেখাতে চাইবে না, কিন্তু হিপু বুঝতে পারত দিপু আসলেই ক্লান্ত।
তারা যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাল, তখন সূর্যটা ডুবে যাচ্ছিল। আকাশটা লাল হয়ে উঠেছিল, আর পুরো গ্রামটা দূর থেকে ছোট্ট একটা খেলনার মতো দেখাচ্ছিল। হিপু আর দিপু দুজনেই চুপ করে বসে পড়ল। এত বড় এক কাজ শেষ করার আনন্দে তারা মুগ্ধ হয়ে গেল।
হঠাৎ দিপু হিপুর দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই জানিস হিপু, আমি সবসময় তোর উপর ভরসা করি। তুই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, কিন্তু তুই শুধু বন্ধু না। তুই আমার জন্য অনেক বেশি কিছু।"
হিপু একটু থমকে গেল। সে এতদিন ধরে বুঝতে পারছিল না, কিন্তু এখন তার মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি জাগতে শুরু করল। সে দিপুর দিকে তাকিয়ে বলল, "তুইও আমার জন্য অনেক বেশি কিছু, দিপু। তোকে ছাড়া আমি কিছুই চিন্তা করতে পারি না।"
এই কথাগুলো বলার পর দুজনের মধ্যে একটা অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল। কিন্তু এই নীরবতা ছিল স্বস্তির, যেন তারা দুজনেই একে অপরের মনের সব কথা বুঝে নিয়েছে।
তারা বসে বসে অনেকক্ষণ সূর্যাস্ত দেখল। সেই মুহূর্তটা ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু ভীষণ অর্থপূর্ণ। তাদের মনের মধ্যে যেন একটা নতুন গল্পের শুরু হল। হিপু আর দিপু সেই দিন থেকেই আর শুধু বন্ধু ছিল না, তাদের সম্পর্কটা নতুন রূপ নিল – ভালোবাসার।
এভাবে তাদের দিনগুলো কেটে যেতে লাগল। তারা গ্রামে একসাথে ঘুরত, কাজ করত, আর প্রতি সন্ধ্যায় সেই পাহাড়ে গিয়ে বসে থাকত। তাদের সম্পর্কটা ছিল অন্যরকম, যেখানে ভালোবাসা ছিল বন্ধুত্বের মিশেলে তৈরি।
কিছুদিন পর গ্রামের লোকেরা বিষয়টা বুঝতে পারল। হিপুর পরিবার ছিল প্রভাবশালী, আর দিপুর পরিবার ছিল সাধারণ, তাই প্রথমে কিছু লোক একটু বাঁকা চোখে দেখল। কিন্তু হিপু আর দিপুর সম্পর্ক এতটাই গভীর আর সৎ ছিল যে কেউ কিছু বলার সাহস পেল না। ধীরে ধীরে সবাই তাদের সম্পর্ককে মেনে নিল।
একদিন হিপু দিপুর কাছে এসে বলল, "দিপু, আমি তোর সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই। তুই কি আমার সাথে থাকবে?"
দিপু হেসে বলল, "তুই জানিস হিপু, আমি তো সেই ছোটবেলা থেকেই তোর সাথে আছি। সারাজীবন তোর সাথে থাকবই।"
তাদের এই মিষ্টি ভালোবাসার গল্পটা ধীরে ধীরে গ্রামের সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই তাদের ভালোবাসার প্রশংসা করত। তারা ছিল গ্রামের সবচেয়ে সুখী দম্পতি, যাদের বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা দুটোই ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ।
এইভাবে হিপু আর দিপু তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একসাথে কাটাতে লাগল। তাদের জীবনের প্রতিটি দিন ছিল আনন্দময়, কারণ তারা একে অপরের সাথে ছিল। তাদের ভালোবাসা ছিল সহজ, সৎ, আর নির্মল – ঠিক তাদের ছোটবেলার বন্ধুত্বের মতোই।
তাদের এই গল্পটা শুধু এক গ্রামের নয়, বরং ভালোবাসার সেই সার্বজনীন গল্প, যেখানে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা মিলে তৈরি করে অটুট একটি সম্পর্ক, যা কখনো ভাঙে না।
কেমন হয়েছে কমেন্টে জানাবেন, ভালো লাগলে লাইক দিবেন শেয়ার দেন আপনার গল্পপ্রেমি বন্ধুর সাথে। আরও নতুন পর্ব চাইলে পেজ ফলো দিয়ে রাখুন ধন্যবাদ।
0 Comments