Recents in Beach

হিপু ও দিপু দুইজন বেস্ট ফ্রেন্ড এর গল্প। পার্ট-2

 


তারপর হিপু আর দিপুর জীবনে আসল নতুন এক অধ্যায়। তারা যখন একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিল, তখন গ্রামের মানুষজনও তাদের গল্পকে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সবসময় জীবন এত সহজ আর সরল হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু বাধা, কিছু কঠিন পরিস্থিতি তাদের সামনে এসে দাঁড়াল।


হিপুর পরিবার চেয়েছিল সে বড় শহরে গিয়ে আরও উচ্চশিক্ষা নিক, যাতে ভবিষ্যতে সে গ্রামের প্রধান হতে পারে। অন্যদিকে, দিপু তার বাবার সাথে কৃষিকাজে সাহায্য করত এবং তার জীবন নিয়ে তেমন বড় কোনো স্বপ্ন ছিল না। সে হিপুকে ভালোবাসত, কিন্তু তার মনে সবসময় একটা ভয় কাজ করত – যদি হিপু তাকে ছেড়ে শহরে চলে যায়? 


একদিন হিপুর বাবা তার সাথে কথা বললেন। তিনি বললেন, "হিপু, তুমি গ্রামেই পড়ে আছো, কিন্তু তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তুমি শহরে গেলে আরও বড় কিছু করতে পারবে। গ্রামের দায়িত্ব একদিন তোমার হাতেই আসবে।"


হিপু বাবার কথা শুনল, কিন্তু তার মনের মধ্যে দিপুর কথা ভাসছিল। সে ভাবছিল, শহরে গেলে তো দিপুকে ছেড়ে যেতে হবে। সে কি দিপুকে ছেড়ে থাকতে পারবে?


এই সময় দিপুও চিন্তায় ছিল। সে ভাবছিল, হিপুর জন্য সঠিক কি? সে চায় হিপু তার স্বপ্ন পূরণ করুক, কিন্তু সেটা করলে হয়তো তাদের সম্পর্কের অবসান ঘটবে। একদিন দিপু হিপুর কাছে এসে বলল, "হিপু, তুই শহরে গিয়ে পড়াশোনা কর। আমি চাই তুই নিজের জন্য বড় কিছু কর। আমি এখানে ঠিক আছি।"


হিপু অবাক হয়ে দিপুর দিকে তাকাল। "তুই কি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবি?" সে প্রশ্ন করল।


দিপু একটু হেসে বলল, "ভালোবাসা মানে শুধু একসাথে থাকা নয়, হিপু। যদি তুই দূরে থাকিস, তবুও আমি তোর সাথে আছি। তুই যা চাইছিস তা পূরণ কর, আমি তোর অপেক্ষা করব।"


এই কথা শুনে হিপু বুঝল, দিপুর ভালোবাসা আসলেই কতটা নিঃস্বার্থ। তার চোখে জল এসে গেল, কিন্তু সে জানত দিপু ঠিকই বলেছে। নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


শেষমেশ হিপু শহরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। যাওয়ার দিন সকালে সে দিপুর সাথে দেখা করতে এল। দিপু তাকে বিদায় জানিয়ে বলল, "তুই যত দূরেই থাকিস, তোর হৃদয়ে আমি সবসময় থাকব। তুই তোর স্বপ্ন পূরণ কর, আমি এখানেই তোর জন্য অপেক্ষা করব।"


হিপু দিপুকে জড়িয়ে ধরে বলল, "তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা, দিপু। তুই আমার জীবনের সবকিছু। আমি তোর জন্য ফিরে আসব, কথা দিচ্ছি।"


হিপু শহরে চলে গেল। সেখানে গিয়ে সে অনেক কিছু শিখল, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হল, কিন্তু তার মনের মধ্যে সবসময় দিপুর মুখটাই ভাসত। সে যত ব্যস্তই থাকত, প্রতি রাতে দিপুকে চিঠি লিখত। দিপু গ্রামের কাজের ফাঁকে সেই চিঠি পড়ত, আর মনে মনে হিপুর ফেরা দিন গুনত।


এরই মধ্যে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। হিপু উচ্চশিক্ষা শেষ করে ফিরে এল গ্রামে। সে গ্রামের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিল। দিপুর জন্য তার ভালোবাসা একটুও কমেনি, বরং আরও গভীর হয়েছিল। 


গ্রামে ফিরে এসে হিপু সবার আগে দিপুর সাথে দেখা করল। দিপু তখনো সেই আগের মতোই ছিল, শুধু সময়ের ছোঁয়া লেগেছে তার মুখে। কিন্তু তাদের ভালোবাসা ছিল আগের মতোই তরতাজা। হিপু দিপুকে বলল, "দিপু, আমি ফিরে এসেছি। এবার আমি তোর সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই।"


দিপুর মুখে এক অমলিন হাসি ফুটে উঠল। সে বলল, "আমি জানতাম তুই ফিরবি। তুই আমার কাছে সবসময় ফিরে আসবি, এটাই তো আমাদের ভালোবাসা।"


হিপু আর দিপুর জীবনে এরপর আর কোনো বাধা আসেনি। তারা একসাথে থেকে গ্রামের উন্নতির জন্য কাজ করতে লাগল। হিপু প্রধান হয়ে গ্রামের জন্য অনেক ভালো কাজ করল, আর দিপু তার পাশে থেকে সবসময় সমর্থন দিল। তাদের এই মিলন ছিল শুধু দুই মানুষের নয়, দুই হৃদয়ের এক চিরন্তন বন্ধনের গল্প, যা কোনো দূরত্ব, সময়, কিংবা পরিস্থিতি ভাঙতে পারেনি।


তাদের ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের এই গল্পটা গ্রামের প্রতিটি মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকল।

Post a Comment

0 Comments