বট গাছের ভুতের গল্প শোনা যায় প্রাচীনকাল থেকেই, আর এমনই একটি গল্প হল “নিশির ডাক”।
### পটভূমি
বাংলাদেশের একটি ছোট্ট গ্রাম—চন্দ্রপুর। গ্রামটি শান্তিপ্রিয় এবং গ্রামবাসীরা বেশ সাদাসিধে জীবনযাপন করে। কিন্তু এই গ্রামের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল বট গাছ, যেটিকে ঘিরে বহু রহস্যময় কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। প্রবীণদের মতে, এই গাছের নিচে রাতে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না, কারণ সেখানে বাস করে এক আত্মা, যাকে স্থানীয়রা "নিশি" নামে ডাকে। নিশি নাকি পথিকদের নামে ডেকে তাদের বশ করে নেয় এবং তাদের আত্মা ছিনিয়ে নেয়।
### গল্পের শুরু
একদিন গ্রামের যুবক রাজীব এবং তার বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা এই গল্পের সত্যতা যাচাই করবে। রাজীব ছিল ভীষণ সাহসী, সে এসব প্রাচীন কুসংস্কার বিশ্বাস করত না। তার বন্ধুরাও রাজীবের সঙ্গ দিতে রাজি হয়ে যায়। তারা ঠিক করে, পূর্ণিমার রাতে বট গাছের কাছে গিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করবে, তাহলে সত্য-মিথ্যা স্পষ্ট হবে।
### প্রথম অস্বাভাবিকতা
রাত ১২টা বাজে, চারপাশে পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে আছে, আর তিন বন্ধু মশাল হাতে নিয়ে বট গাছের দিকে রওনা দেয়। যতই তারা গাছের কাছে পৌঁছায়, ততই চারপাশের পরিবেশ অদ্ভুত হয়ে ওঠে। বট গাছটির শিকড়গুলো দেখে তাদের মনে হচ্ছিল যেন তা জীবন্ত এবং তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। রাজীব হাসতে হাসতে বলল, “কিছুই হবে না। সবই ভয় দেখানোর গল্প।”
কিন্তু ঠিক তখনই তাদের পেছন থেকে একজন নারীর কণ্ঠ ভেসে এল—"রাজীব!"। রাজীব থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তার বন্ধুরা তখন তাকে জিজ্ঞাসা করল, "কেউ কি তোমাকে ডাকল?" রাজীব বিস্মিত হয়ে বলল, "হ্যাঁ, কিন্তু সেটা কোথা থেকে এলো?" সবাই চারপাশে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। তবে বাতাস হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা হয়ে গেল।
### নিশির উপস্থিতি
তারা ভাবল, হয়তো বাতাসের শব্দ হবে, তাই আবার গাছের দিকে এগোল। ঠিক সেই মুহূর্তে নারীর কণ্ঠ আবার শোনা গেল, এবার আরও জোরে— "রাজীব, এদিকে আসো!" রাজীব এবার ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু তার সাহসী মন তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলল। সে বলে উঠল, "কাউকে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাব না!" বলে গাছের তলায় গিয়ে বসল। হঠাৎ করেই গাছের শিকড়গুলো নড়তে শুরু করল। তারা তিনজন বুঝতে পারল যে কিছু একটা ভয়ানক ঘটতে চলেছে।
এক মুহূর্তের মধ্যে গাছের ডালপালা থেকে এক নারীমূর্তি ঝুলে পড়ল। তার চোখ দুটো লাল এবং চুলগুলো এলোমেলো। মূর্তিটি আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসছে, আর সাথে সাথে চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। এবার আর কোনো সন্দেহ রইল না, নিশি সত্যিই উপস্থিত।
### পালানোর চেষ্টা
রাজীব দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তার পা শিকড়ে আটকে গেল। তার বন্ধুরা তাকে টেনে নিয়ে পালাতে চেষ্টা করল, কিন্তু সেই নারীমূর্তি তাদের পেছনে পেছনে আসছিল। তারা কোনো রকমে শিকড় থেকে পা ছাড়িয়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে ছুটল। নিশির ভয়ানক হাসির আওয়াজ তখনও তারা শুনতে পাচ্ছিল, আর সেই হাসি তাদের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
### পরিণতি
পরদিন সকালে গ্রামবাসীরা রাজীবকে পুরোপুরি অবশ এবং কথা বলার ক্ষমতা হারানো অবস্থায় পেল। রাজীবের বন্ধুরা তখন পুরো ঘটনা গ্রামের মুরুব্বিদের জানাল। মুরুব্বিরা বললেন, বহু বছর আগে এক নারী এই বট গাছের নিচে আত্মহত্যা করেছিল। তার মৃত্যুর পর থেকেই এই গাছের সাথে তার আত্মা জড়িয়ে আছে এবং রাতের বেলায় সে পথিকদের ডেকে নিয়ে যায়। তাকে যারা নামে ডাকে সাড়া দেয়, তারা আর কখনো জীবিত ফেরে না।
### শিক্ষণীয় দিক
এই ঘটনার পর থেকে গ্রামের কেউ আর বট গাছের ধারে কাছে যায় না। এটি তাদের কাছে শুধু ভয়ের গল্প নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা। কিছু জায়গা বা কিছু কাহিনী হয়তো কুসংস্কার বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তার পেছনে থাকতে পারে এমন কিছু সত্য, যা মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
0 Comments